জাবি প্রতিনিধি
প্রায় ৮০ ঘণ্টা পর গত রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত পৌনে নয়টায় মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলমের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনরত শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম এবং উপ-শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম ডাবের পানি পানের মধ্যে দিয়ে অনশন ভাঙেন।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের দেওয়ালের একাংশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার ও ৩ দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা এনামুল হক এনাম ও রিয়াজুল ইসলাম।
তারা যে দাবিগুলো — বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননাকারীদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় আইনে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, আট দিন পার হলেও জড়িতদের ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা বিষয়ে তদন্ত করা।
ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক এনাম বলেন, আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং একটা পরিষ্কার বার্তা যেন আসে বঙ্গবন্ধুকে অমান্য করে কেউ পার পাবে না। আমি একটা দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখতে চাই। উপাচার্য আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি উত্থাপন করবেন এবং জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করবেন। তবে যদি দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা দেখতে না পাই আমি আবার অনশনে বসবো। শুধু আমি না, ছাত্রলীগ সভাপতি নিজে বলেছেন আরো কঠিন পদক্ষেপে যাবেন।
জড়িতদের শাস্তির বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা বলেন, আমি চাই তাদেরকে যেন অন্তত সাময়িক বহিষ্কার করা হয় বা যেভাবেই হোক দৃশ্যমান একটা পদক্ষেপ যেন গ্রহণ করা হয় সেটাই আমার চাওয়া, বাকি সিদ্ধান্ত সিন্ডিকেট নিবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বলেন, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট সভায় বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র মুছে দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে অনশনকারীরা। যদিও সেটা তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার উপর নির্ভরশীল। তবুও আশা করছি, আগামী সিন্ডিকেট সভায় এই বিষয়টি উত্থাপন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবো।
উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের দেয়ালে পূর্বে আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে একটি গ্রাফিতি অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডের প্রতিবাদে এ গ্রাফিতি অঙ্কন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তারা। গ্রাফিতিতে অঙ্কন করা হয়েছিলো একটি নারীর অবয়ব, ছয়টি মাথার খুলিসহ একটি পতাকা । সেখানে লিখা ছিলো ‘ধর্ষণ ও স্বৈরাচার থেকে আজাদী’। সেই সাথে গ্রাফিতির নিচে ছাত্র ইউনিয়ন সংগঠনের নাম লিখা হয়েছিলো।
নারীর অবয়বের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পূর্বের প্রতিকৃতি মুছে ফেলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করা হয়েছে বলে দাবি করে অনশনে বসেছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনাম।
এ ঘটনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হেল কাফিকে সভাপতি করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
Leave a Reply